
চলতি মৌসুম আম চাষীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আম চাষীদের নানান সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্যে আমের মুকুল ও গুটি ঝরা অন্যতম। আমগাছে মুকুল আসার পর গুটি আসার সময় নানান কারণে ঝরে যায়। তাই আম চাষীদের এসময় অনেক সতর্ক থাকতে হয়। কৃষিবিদদের পরামর্শানুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হয়।
আমের গুটি ঝরার কারণ: আম গাছে প্রতি মুকুলে ১০০০ থেকে ৬০০০টি পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। যার মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি থোকায় বিভিন্ন জাত ভেদে ৩০টি আমের গুটি ধরতে দেখা যায়। আর গুটি আসার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এক থোকায় দু-একটি গুটি থাকে। বাকিগুলো নানান কারণে ঝরে পড়ে। কিছু কিছু থোকায় চার-পাঁচটি আম ধরতেও দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে আমের আকার ছোট হয়।
মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলেও আমের গুটি ঝরে যায়। আমের গুটি আসার সময় থেকে বৃদ্ধি পর্যন্ত মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয়। তাই বাগানের মাটিতে রসের অভাব হলে ফলের বোঁটায় তারাতারি দুর্বল হয়। ফলে গুটি ঝরে পড়ে।
আমের গুটি ঝরা কমাতে ফুল ফোটার ১০-২০ দিন পর দুইবার দশ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড স্প্রে করলে ভালো হয়। এছাড়া সব ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়।
মাটিতে রসের অভাব: মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়। আমের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয়। মাটিতে রসের অভাব হলে আমের বোঁটায় তাড়াতাড়ি নির্মোচন স্তর গঠিত হয়। ফলে আমের গুটি ঝরে যায়। মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চারপাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে।
প্রথম সেচ দেওয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে হালকা সূর্যের আলোয় আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।
পোকার আক্রমণ: আমের ফুল থেকে গুটি আসার সময় গুটিতে হপার পোকার আক্রমন হতে পারে। এ পোকার পূর্ণবয়স্ক মথ ও কিড়া গুটির রস শোষণ করে, ফলে আমের গুটি ঝরে পড়ে। আমের গুটির এ পোকা দমনে গুটি মটর দানার মতো হলেই কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০ ইসি গ্রæপের কীটনাশক এক মিলিলিটার হারে প্রতি লিটার পানিতে এবং মেনকোজেব ৮০ ডচ গ্রæপের ছত্রাকনাশক দুইগ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে স্প্রে করতে হবে।
এছাড়াও আমের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনেও মার্বেল আকারের বড় গুটিও ঝরে পড়ে। এমন সমস্যা দেখা দিলে আম বাগান বা গাছ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাছের মরা ডাল পালা ছেঁটে ফেলতে হবে।
আমের বাগানে এছাড়াও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগবালাই আক্রমন করতে পারে। তাই স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসে কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।