
আমন ও বোরো মৌসুমের মধ্যবর্তী সময় আউশ আবাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত শস্য আবাদের সুযোগ রয়েছে কৃষকের। এজন্য আউশ আবাদে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভালো জাতের অভাব থাকায় আউশ ধান আবাদে খুব একটা আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক। কৃষকের এ চাহিদা পূরণে আউশে আবাদযোগ্য ধানের প্রথম হাইব্রিড জাতের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। জাতীয় বীজ বোর্ডের ৯৮তম সভায় তিনটি জেলায় জিবিকে হাইব্রিড ধান-২ নামের আউশে চাষযোগ্য ওই ধানের জাত আবাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে আউশের উৎপাদনশীলতা হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক শূন্য ৪ টন, যা গত কয়েক বছরে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার উৎপাদন ও আবাদ এলাকার পরিমাণেও খুব একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। কয়েক বছর ধরেই ফসলটি আবাদ হচ্ছে গড়ে ১০ লাখ হেক্টরে। আর উৎপাদনও আটকে রয়েছে ২২-২৩ লাখ টনের মধ্যেই। এজন্য উচ্চফলনশীল ধানের জাতের চাহিদা বাড়ছে। তাই কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গোল্ডেন বার্ন কিংডম প্রাইভেট লিমিটেডের (জেডি-০১৩) হাইব্রিড ধানের জাত জিবিকে হাইব্রিড ধান-২ বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম তিনটি অঞ্চলে আউশ মৌসুমের প্রথম হাইব্রিড জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য সাময়িকভাবে ও চারটি শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধনের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে প্যাকেটের গায়ে বীজ উৎপাদনের বছর, প্যাকিংয়ের তারিখ ও কোন অঞ্চলের জন্য নিবন্ধনকৃত তা উল্লেখ করতে হবে। যে অঞ্চলের জন্য নিবন্ধন দেয়া হবে, শুধু সে অঞ্চলেই বীজ বিক্রি করতে হবে। এছাড়া যে নামে হাইব্রিড জাত নিবন্ধন করা হবে, শুধু সে নামেই (প্যাকেটের গায়ে উল্লেখপূর্বক) বাজারজাত করতে হবে। পরবর্তী সময়ে কোনোক্রমেই অন্য বিকল্প নাম সংযোজন বা পরিবর্তন করা যাবে না। এছাড়া বীজের গুণাগুণ পরীক্ষার জন্য সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে হাইব্রিড আমদানিকারক কোম্পানির সম্পাদিত (এমওইউ ও পোর্ট অ্যারাইভাল রিপোর্ট) বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কাছে সরবরাহের শর্ত দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানির নামের সঙ্গে মিল রেখে নিবন্ধনকৃত হাইব্রিড জাতের বাণিজ্যিক নাম সংযুক্ত করে বাজারজাত করার বিষয়টিকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান বীজতত্ত্ববিদ মো. আজিম উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে আউশের আবাদ বাড়ানো প্রয়োজন। দেশে আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য হাইব্রিড ধানের কোনো জাত নেই। গোল্ডেন বার্ন কিংডম প্রাইভেট লিমিটেডের প্রস্তাবিত বীজ চীনা কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল সিড গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড থেকে আমদানি করা। জাতটির চাল সরু। গড় জীবত্কাল ১১৩ দিন। গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৯ টন। জাতটি বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম তিনটি অঞ্চলে আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য সাময়িকভাবে ও শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধনের জন্য কারিগরি কমিটির ৯১তম সভায় সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে চালের চাহিদা পূরণে বোরোর ওপর নির্ভরশীলতার চাপ কমানোর পাশাপাশি উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও বরেন্দ্র এলাকার যেসব জেলায় সেচের সুব্যবস্থা নেই, সেসব এলাকায় আউশের আবাদের চেষ্টা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের আউশনির্ভর জেলাগুলোতেও আউশের উচ্চ উৎপাদনশীল বিভিন্ন জাতের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর। মূলত প্রচলিত জাত দিয়ে আউশ আবাদ করার কারণে এর হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা বেশ কম। এজন্য কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন না। জলবায়ু পরিবর্তন ও পানির অভাবের কারণে বোরো ধানের বেশকিছু এলাকায় এখন আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগও কমে এসেছে। এছাড়া আউশ মৌসুমে পানির সহজলভ্যতা থাকে বেশি। ফটোপিরিয়ডও (সালোক সংশ্লেষণের জন্য সূর্যালোকের উপস্থিতি) বেশি পাওয়া যায়। তাই ভালো মানের জাত পেলে অল্প খরচে বেশি পরিমাণে আউশ ধান উৎপাদন সম্ভব। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন এ হাইব্রিড ধানের জাত নিবন্ধনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত আউশ মৌসুমের (জেডি-০১৩) হাইব্রিড ধানের জাতটির ট্রায়ালের বিস্তারিত ফলাফলসহ জাতীয় বীজ বোর্ডের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করতে হবে।