
ন্যাশনাল ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. কাজী এম বদরুদ্দোজার নামে নামকরণ করা হয় ‘কাজী পেয়ারা’। দেশের বাজার এখন সয়লাব এই কাজী পেয়ারায়। এর চাষ সহজ এবং ফলনও বেশি। তাই সহজেই কাজী পেয়ারা চাষ করছেন কৃষকেরা।
কাজী পেয়ারার বৈশিষ্ট্য
১. উচ্চ ফলনশীল জাত।
২. গাছ খর্বাকৃতির, মোটামুটি খাড়া ও মধ্যম ঝোপালো।
৩. বছরে দুই বার ফল দেয়।
৪. প্রধান মৌসুমে মার্চ-এপ্রিল মাসে গাছে ফুল আসে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল আহরণ উপযোগী হয়।
৫. ফল উপবৃত্তাকার, বোটার দিকে সামান্য সরু, গড় ওজন ৪৪৫ গ্রাম।
৬. পরিপক্ব ফলের রং হালকা।
চাষপদ্ধতি
মাটি নির্বাচন: হালকা বেলে মাটি ও দো-আঁশ মাটিতে পেয়ারা ভালো হয়।
বপনের সময়: মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস কাজী পেয়ারার চারা বা কলম লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেচের সুব্যবস্থা থাকলে সারাবছরই এই পেয়ারার চারা বা কলম রোপণ করা যায়।
গর্ততৈরি ও সার প্রয়োগ
চারা লাগাবার জন্য ৬০ সে.মি. প্রস্থ এবং ৪৫ সে.মি. গভীর গর্ত করে প্রতি গর্তে নিন্ম লিখিত সার প্রয়োগ করা উচিত।
১। পচা গোবার অথবা আর্জনা পচা সার ১০/১২ কেজি
২। সরিষার খৈল ১ থেকে ২ কেজি
৩। ট্রিপল সুপার ফসফেট ঙ্গ থেকে ১ কেজি
উপরোল্লিখিত সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করে ৮ হতে ১০ দিন রেখে দিতে হবে। চারা লাগাবার পর চারাটিরকে একটি শুক্ত খুটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে যেন বাতাসে চারার কোনো ক্ষতি না হয়।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে:
দুপুরে সূর্য যখন খাড়া আমাদের মাথার উপরে থাকে গাছের সেই ছায়াটি মাটির যতটুকু জায়গা জুড়ে পড়বে ততটুকু জায়গার মাটির সাথে সার মিশিয়ে দিতে হবে।
পরিচর্যা: গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। রোপণের পর প্রথমদিকে মাটি ঝুরঝুরে রাখতে হবে। না হলে চারা দ্রুত বাড়বে না। এজন্য মাঝে মাঝে বিশেষ করে সেচ দেওয়ার পর জমিতে জো এলে কোদাল দিয়ে জমির চটা ভেঙে দিতে হবে।
বিভিন্ন বয়সের গাছের প্রতি বছর সারের পরিমাণ (গ্রাম)
সারের নাম | ১-২ বছর বয়সের গাছ | ৩-৫ বছর বয়সের গাছ | ৬ বা ততোধিক বছর বয়সের গাছ |
পঁচা গোবার | ১০-২০ কেজি | ২৫-৪০ কেজি | ৬০ কেজি |
ইউরিয়া | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২৫০-০০০ গ্রাম | ৫০০ গ্রাম |
টিএসপি | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২৫০-৪০০ গ্রাম | ৫০০ গ্রাম |
মিউরেট অব পটাশ | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২৫০-৪০০ গ্রাম | ৫০০ গ্রাম |
রোগবালাই ও পোকামাকড়
কাজী পেয়ারার রোগবালাই নেই বললেই চলে। পোকামাকড়ের মধ্যে ফল ও কাণ্ড খননকারী পোকাই প্রধান। এ পোকা প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ সিস ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে গাছে ছিটিয়ে দমন করা যায়। এছাড়া পাখি ও বাদুর পেয়ারার যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। গাছে টিন পিটিয়ে এর উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
ফল আহরণ: কাজী পেয়ারা আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফল আহরণ উপযোগী হয়। তবে বীজের গাছের তুলনায় কলমের গাছ বেশি ফলন দেয়। ফল আহরণের উপযুক্ত হলে সবুজ রং পরিবর্তিত হয়ে হলুদাভ সবুজ বা হলুদ হয়। প্রতিটি ফল এক এক করে সম্ভব হলে সিকেচার দিয়ে কেটে আহরণ করতে হয়।
সূত্র: কৃষি বাতায়ন ও কৃষি তথ্য সার্ভিস