
ফসলি জমিতে বিভিন্ন ধরনের বালাই নিয়ন্ত্রণ ও কীটনাশক ব্যবহার হ্রাস করতে অভিনব কৌশল হিসেবে ‘সোলার ইনসেক্ট লাইট ট্র্যাপ’ বা সৌর আলোক ফাঁদ উদ্ভাবন করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একদল গবেষক।
পরিবেশবান্ধব এ যন্ত্রকৌশল ব্যবহার কৃষিতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার নিকট ভবিষ্যতে অনেকাংশে কমিয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মান গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করছেন।
উদ্ভাবিত সৌর আলোক ফাঁদ সূর্যের আলোকশক্তি ব্যবহার করে ফসলের পুরুষ ও স্ত্রী দুই ধরনের পোকামাকড়কেই ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বলে দাবি করা হয়েছে।
সাধারণত পোকামাকড় রাতে রাস্তার আলো বা ঘরের কিংবা অন্যান্য বাইরের আলোর দিকে উড়ে যায়। বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের এ যন্ত্রটির ডিজাইন করা হয়েছে। সোলার ইনসেক্ট লাইট ট্র্যাপ পরিবেশবান্ধব এবং ফসলের জমির যেকোনো স্থানে স্থাপন করা যায়।
এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সিল করা ব্যাটারি, চার্জ কন্ট্রোলার, রিলে সার্কিট, এলইডি লাইট, বাল্ব হোল্ডিং ফানেল, পোকা সংগ্রহের চেম্বার, ব্যাটারি বক্স এবং আয়রন বেস ফ্রেম। প্রতি একরে বসানো যাবে একটি করে সোলার ইনসেক্ট লাইট ট্র্যাপ।
গবেষণায় দেখা গেছে, আলোক ফাঁদ ব্যবহারে ফলন ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আলোক ফাঁদবিহীন খামারের তুলনায় ধান, ভুট্টা এবং সবজির খামারগুলোতে ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার কমানো গেছে। আমের ফলনও বেড়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। এছাড়া পোকামাকড় দমনে রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এতে পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে এ প্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যয় অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কীটনাশক ব্যবহারে দিনের বেলার বেশিরভাগ উপকারী পোকামাকড় মারা যায়। সৌর আলোক ফাঁদ ব্যবহারে একদিকে যেমন উপকারী পোকা রক্ষা করা সম্ভব অন্যদিকে নিশাচর পোকামাকড়ের নমুনা পর্যবেক্ষণ করে নির্ণয় করা যাবে ক্ষতিকর পোকার পরিমাণ।
এই প্রকল্পের কীটতত্ত্ববিদ হিসেবে নিয়োজিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, রাতের অন্ধকারে ক্ষতিকর পোকাগুলো সোলার লাইট ট্র্যাপের ইউভি লাইটের আলোয় আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদে এসে আটকা পড়ে। এতে নিশাচর ক্ষতিকর পোকামাকড়ের পরিমাণ ও নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। সেই সঙ্গে কমে যাবে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের পরিমাণও।
এরই মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ২০০টি সোলার ইনসেক্ট লাইট ট্র্যাপ বসানো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা এবং মানিকগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলায় এক হাজার লাইট ট্র্যাপ স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মান বলেন, সামগ্রিকভাবে বৈদ্যুতিক শক্তি সেক্টর থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার প্রায় ৩৪ শতাংশ। যার বেশিরভাগই আসে জীবাশ্ম জ্বালানি দহন থেকে। একই সঙ্গে কীটনাশকের ব্যবহার মাটি, পানি ও বাতাসের জন্য ক্ষতিকর। এসব ব্যবহার করতে গিয়ে কৃষকদেরও স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। এক্ষেত্রে একটি সৌর প্যানেল সিস্টেম স্থাপন জলবায়ু পরিবর্তন এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে সাহায্য করবে।