
বিশেষ প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদ উল আজহা, মুসলিম জাতির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এ ঈদ কোরবানীর ঈদ নামেও পরিচিত। ঈদ উল আজহা আরবি শব্দ যার শাব্দিক অর্থ ত্যাগের উৎসব। আর মুসলমানেরা ঈদের ফরজ নামাজের পর যার যার সামর্থ্যানুযায়ী আল্লাহর নামে পশু কোরবানী করে থাকে। আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদুল আযহা। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন পশু খামারিরাসহ সাধারণ মানুষও পশু বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এগুলো সামর্থ্যানুযায়ী কিনে মুসলিম জাতি ধনী গরীব সকলের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগ করে থাকে। এ উপলক্ষে দেশের খামারিরা বিভিন্ন সাইজের গবাদী পশু বিক্রি করে থাকে। তেমনি এক গরু বিক্রির প্রস্তুতি চলছে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায়। যা “বাংলার বাহাদুর” নামে পরিচিত। ঈদের কোরবানী পশুর বাজার কাপাতে আছে এ বাংলার বাহাদুর। যার দাম হাকানো হচ্ছে ২৩ লক্ষ টাকা।
কালচে লাল রঙের ও সুঠাম দেহের অধিকারী দেশী জাতের বিশাল এ ষাঁড়টি (বাংলার বাহাদুর) শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বানেশ^রদী এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে আমিনুল ইসলামের শখের বশে পালিত দেশীয় জাতে ষাঁড়। চাষী আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, নিজের পালিত দেশীয় গাভীর বাচ্চা ষাঁড়টি আজ এত বড়। তাদের দেখা দেশীয় প্রজাতীর ষাঁড়ের মধ্যে এটি অন্যতম ষাঁড়। তাই একে বাংলার বাহারদুর নামে ডাকা হয়।
আমিনুল ইসলাম আরো জানান, বাংলার বাহাদুরের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং ওজন প্রায় ৩৬ মণ (সাড়ে ১৪শ’ কেজি)। বাছুর অবস্থা থেকেই এটিকে জেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড়ে পরিণত করার লক্ষে লালন পালন শুরু করেন আমিনুল ইসলাম।
শান্ত প্রকৃতির বাংলার বাহাদুরকে দেখতে আমিনুল ইসলামের বাড়িতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ভীড় জমাচ্ছেন। কেউ মোটর সাইকেল বা নিজস্ব কোন পরিবহণ দিয়ে আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গেলেই স্থানীয়রা তার বাড়িতে ভিড় করেন। তখন স্থানীয়রা মনে করেন আগতরা হয়তোবা বাংলার বাহাদুরকে কিনতে এসেছেন। তাই মুহুর্তের মধ্যে ভিড় জমিয়ে ফেলেন স্থানীয় জনগন ও দর্শনার্থীরা।
আমিনুল ইসলাম বলেন, বাহাদুরকে গরু মোটাতাজা করণের ফিড কিনে খাওয়ানোর মতো আমার সামর্থ নেই। তাই সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে বাংলার বাহাদুরকে বড় করা তুলেছি। বাহাদুরকে বর্তমান অবস্থায় আনতে সময় লেগেছে প্রায় ৫ বছর। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মো. আনিসুর রহমানের পরামর্শে, গরুর ওজন ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক (ব্যালেন্সড) সুষম খাবার খাওয়ালে অর্থ ও ঝুঁকি দুটোই কমবে এবং নিরাপদ মাংস উৎপাদিত হবে। তাই বাংলার বাহাদুরের খাদ্য তালিকায় রাখা হয়েছে- পরিমিত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবুজ ঘাস, গাছের পাতা, খড়, গমের ভূষি, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটা গুড়, মিষ্টি লাউ, গোল আলু, চালের কুড়া, লবণ ও প্রয়োজন মতো পানি।
তাছাড়া বাংলার বাহাদুরকে নিয়মিত গোসল করানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে রাখা, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত কিছু সময় হাঁটানো, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রুটিন মতো ভ্যাকসিন দেওয়া ও কৃমির ওষুধ খাওয়ানোসহ সবকিছুই করা হচ্ছে দেশীয় ব্যবস্থাপনায়। বাহাদুরকে মোটাতাজা ও আকর্ষণীয় করতে কোনো প্রকার ক্ষতিকর ঔষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়নি বলেও জানান বাহাদুরের লালন পালনকারী আমিনুল ইসলামসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
বাংলার বাহাদুরের বিক্রি দাম নিয়ে তিনি বলেন, বাজার অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে। পশুরু দাম ক্রেতা ও বিক্রেতার উপর নির্ভর করে তবে আমি প্রথমে ২৮ লাখ টাকা দাম চাইলেও, করোনার বিষয়টি মাথায় নিয়ে আপাতত ২৩ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। গত বছর কোরবানী ঈদের বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকার গাবতলীতে নিয়ে গেল, ন্যায্য দাম না পেয়ে বিক্রি করেননি বলে জানান ষাঁড়টির মালিক আমিনুল ইসলাম। এ বছর সঠিক দাম পেলে এ ষাঁড়টি বিক্রি করবেন বলে জানান এবং ভবিষ্যতে এমন দেশীয় জাতের গরু পালনে তিনি ও এলাকার বেকার যুবকেরাও আগ্রহী হবে।
নকলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মো. আনিসুর রহমান জানান, আমার জানা মতে এ দেশীয় জাতের ষাঁড়টি (বাংলার বাহাদুর) ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে দেশী ষাঁড়। এ দেশীয় জাতের ষাঁড়টিকে সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাইয়ে লালন পালন করা হয়েছে। দেশী জাতের এমন আকৃতির ষাঁড় খুব একটা নজরে পড়ে না।