
পেঁপে একটি জনপ্রিয় ফল। পাকা পেঁপে খেতে খুবই সুস্বাদু। আর কাঁচা থাকতে সবজি হিসেবে রয়েছে এর ব্যাপক ব্যবহার। তাইতো প্রগতিশীল কৃষকরা পেঁপে চাষে ব্যবহার করছেন আধুনিক পদ্ধতি ‘গুটি কলম’। যা খুলনাঞ্চলে পেঁপে চাষাবাদে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
বাজারে কাঁচা-পাকা এই দুই ধরনের পেঁপেরই প্রচুর চাহিদা রয়েছে। হরেক রকমের পুষ্টি ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন এই পেঁপে চাষ করে নিজের ভাগ্য পরীক্ষায় আবারও উত্তীর্ণ হয়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক। তিনি চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ শতাংশ জমিতে রেডলেডি জাতের পেঁপে গাছের কলম রোপণ করেছেন। আর প্রথমবারই পেয়েছেন সফলতা। তার এ পদ্ধতি দেখেতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এখন গাছে ফলন দেখে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন এই কৃষক।
এলাকার এক বড় ভাইয়ের পেঁপে বাগানে ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া গাছের মাথায় একাধিক শাখা গজায়। এই শাখায় নবদ্বীপ গুটি কলম করেন। এছাড়া পুরনো পেঁপে গাছেও কিছু শাখা গজালে, সেই শাখাতেও করেন কলম। কলম করার ৫০ দিন পরে শেকড় পরিপূন্ন হলে সেই কলম কেটে রোপণ করেন নিজের জমিতে। প্রতিটি কলমের উচ্চতা দেড়/দুই ফুট। জৈব সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করে সেখানে ৬ ফুট দৈঘ্য এবং ৬ ফুট প্রস্থ এ কলম রোপণ করেন। এর ফাঁকে ফাঁকে রোপন করেছেন বেগুন এবং মরিচ গাছ। সেখানে ফলন হয়েছে বেশ।
প্রগতিশীল কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক জানান, মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবে। অন্যের পেঁপে বাগানে কলম তৈরি করেছি। তার মুলটি গাছ টিকিয়ে রেখে কলম করেছি। এধরণের কাজ প্রথম হওয়ায় অনেকেই তাচ্ছিল্য করেছিল। তারা এখন অবাকই হয়। এ ধরণে গাছ যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন ফল দিবে।
একই এলাকার কৃষক গৌতম সরকার জানান, আমাকে যখন নবদ্বীপ বললো যে, সে আমার পেঁপে বাগানে কলম করতে চায়। আমি কিছুটা অবাক হই। পরে আমার মুল গাছের ক্ষতি না করে কলম করার অনুমোতি দেই। ও সফল হয়েছে। ওর কাজ দেখে আমারও ভাল লেগেছে। জীবনে একটু রিস্ক না নিলে সফলতা আসে না। এটি নতুন পদ্ধতি। তাকে দেখে এ এলাকার অনেকেই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন জানান, পেঁপে সাধারণত বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। এবছরই প্রথম বরাতিয়া গ্রামের প্রগতিশীল কৃষক নবদ্বীপ মল্লিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে গুটি কলম তেরি করে পেঁপের চাষ করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে জাতের বিশুদ্ধতা বজায় থাকে, অল্প সময়ের মধ্যে গাছে ফল ধরে এবং গাছ কিছুটা ছোট হওয়ায় ঝড়ে সহজে ভেঙে যায়না এবং কৃষক দ্রুত লাভ পায়।