
নাজমুল ইসলাম, জৈন্তাপুর: জৈন্তিয়ার জারা লেবুর কদর এখন দেশ বিদেশে। সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় জারা লেবু চাষ করে প্রায় ২শ কৃষক পরিবার এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয় এলাকার উৎপাদিত জারা লেবু দেশের বাজার ছেড়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। যার ফলে বদলে যাচ্ছে কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। পাশাপাশি আন্যান্য ফসলের চেয়ে জারা লেবুর চাষ লাভবান হওয়ায় জারা লেবু চাষের দিকে ঝুকছে কৃষক পরিবার।
ভূমি ও টিলা শ্রেণী হওয়াতে লেবু চাষের জন্য খুবি উপযোগী। জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল, হরিপুর, জৈন্তাপুর ও ফতেহপুর বাজারে জারা লেবুর জন্য সিলেটের মানুষের কাছে পরিচিত। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা জারা লেবু ক্রয় করতে আসে। উন্নত প্রক্রিয়া জাত করে ব্যবসায়ীরা দেশের বাহিরে লন্ডন, আমেরিকা, সিংঙ্গাপুর, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত সহ মধ্য প্রাচ্যার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
সরেজমিন উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর, হরিপুর, বাগেরখাল, শিকারখাঁ, উৎলারপার, চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর, পানিছড়া, ঠাকুরের মাটি, নিজপাট ইউনিয়নের কালিনঞ্জিবাড়ি ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বানিগ্রাম সহ বিভিন্ন অঞ্চলে টিলা শ্রেণীর ভূমিতে বাণিজ্যিক ভাবে জারা লেবু চাষ হচ্ছে। অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় জারা লেবু চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক পরিবার গুলো।
এই অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক অন্যান্য ফসল চাষ বাদ দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় জারা লেবু চাষের দিকে ঝুকছেন। এলাকার অধিকাংশ জনগন অন্য কোন পেশা না থাকায় জারা লেবু চাষে দিন দিন বেড়ে চলেছে। ফলে এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামের সাধারণ লোকজন। এক সময় প্রচুর জমি বছরে পর বছর অনাবাদী থাকতো এখন এসব জমির কদর অন্য সব জমির চেয়ে কয়েক গুন বেড়ে গেছে। জারা লেবুর কলম করা চারা রোপনের ২বছর পর হতে ফলন আসতে শুরু হয় এবং গাছ গুলো ৫বছরের অধিক সময় পলন পাওয়া যায়। জারা লেবুর বৈশিষ্ট হলে খুব স্বাদ ও টক জাতীয় ফল। লেবু দেখতে অনেকটা কুমড়ার মতো। লেবুর রস তেমন না থাকলে ও তা খেতে খুব স্বাদু।
বাগেরখাল গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বারের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, জারা লেবু চাষের জন্য আমাদের এলাকাটি খুব উপযোগি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা জারা লেবু চাষ করেছেন শুধু নিজ পরিবারের জন্য, আমরা এখন বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করতে শুরু করেছি। বাগেরখাল গ্রামের কৃষক সামছুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ দিন থেকে আমি লেবু চাষ করে আসছি। বিগত দিনে আমি সরকারি ভাবে সার ও কিটনাশক পেলে বর্তমানে আর আমার ভাগ্যে তা ঝুটছে না। আমরা যদি ভালো জাতের চারা ও প্রশিক্ষন পেতাম তাহলে লেবুর উৎপাদন দিগুণ তগিুন বৃদ্ধি হত। প্রতিদিন আমার বাগানে ৫জন শ্রমিক পরিচর্যার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন। চলতি মৌসুমে বাগান হতে ১লক্ষ টাকা মুনাফা হয়েছে।
সরকার যদি আমাদের মতো প্রকৃত চাষিদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা ও রোগ বালাই প্রতিরোধের জন্য কিটনাশক এবং উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করলে উপকৃত হতে পারতাম ও জারা লেবু বিদেশের বাজারে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল হাসান নজরুল প্রতিবেদককে বলেন- জৈন্তাপুরের মাটি ও আবহাওয়া সাইট্রাস জাতীয় ফলের জন্য উপযোগী। রয়েছে উচু নিচু টিলা বৃষ্টি পানি সহজেই গাছের গুড়ায় জমে থাকে না, এজন্য জৈন্তাপুর সাইট্রাস ও লেবু জাতীয় ফসল কম খরচে বেশী উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের গবেষণা কেন্দ্র নিয়মিত ভাবে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও চারা সরবরাহ করছে। তাছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে।