
লটকন বা লটকা (Burmese grape) এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্যাকারিয়া স্যাপাডিয়া (Baccaurea sapida) যার পরিবার হল ইউফোরবিয়া (Euphorbiacea). এ ফল অম্লমধুর ভরা মুখরোচক ফল হিসাবে সবার নিকট সমাদৃত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর জন্মস্থান হলেও বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্র লটকন গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এ দেশে ব্যাপক ভাবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে উৎপাদন দেখতে না পেলেও গেরস্থলীর অংশ হিসাবে দু-একটি গাছ বা ছোট পরিসরে কয়েকটি গাছের বাগান দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি এ ফল নিয়ে কিছু চিন্তা-ভাবনা করলেও আধুনিক চাষাবাদ নিয়ে কেহ তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কাজ করে নাই।
উদ্ভিদতত্ত্বঃ লটকন একটি মাঝারি আকারের বৃক্ষ। ইহা সব ধরণের আবহাওয়ায় জন্মে; তবে উষ্ণ-আদ্র আবহাওয়া ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে ভাল হয়। ফল গোলাকার লম্বা ছড়ায় কাণ্ড ও ডালে ঝুলে থাকে এবং বীজের চার পাশ্বে পাতলা স্তরে অম্লমধুর শাঁস থাকে। শীতের শেষে ফুল আসে ও জুলাই- আগষ্ট মাসে পাকে।
পুষ্টি উপাদানঃ লটকনের প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণ যোগ্য শাঁসে ১.৪২ ভাগ আমিষ, ০.৪৫ ভাগ স্নেহ, ০.৬৪ ভাগ আঁশ, ০.৯ ভাগ খনিজ, ০.০৩ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.৩ মি.গ্রা. লৌহ ও ৯১ কিলোক্যালোরি খাদ্য শক্তি থাকে।
সুবিধা (যে জন্য চাষ করা যায়)ঃ (১) বাংলাদেশের প্রচলিত ফল যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি ফলের মধ্যে অধিকাংশ ফলের চেয়ে ফলন ও বাজার মূল্য বেশী, তাই এ ফল চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। (২) পতিত, অউর্বর, অনাবাদি যে কোন জমিতে জন্মানো যায়। (৩) রৌদ্র থেকে কিছু ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মে; তাই বাড়ির আশে-পাশ্বে, বাগান, বন, জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত বিভিন্ন স্থানে সহজে জন্মানো যায়। (৪) তেমন কোন সার দেয়ার দরকার হয় না ( তবে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করলে একটি ১০-১৫ বছর বয়সের গাছে প্রতি বছর বর্ষার আগে দুপুর বেলা যতটুকু স্থানে ছায়া পড়ে ততটুকু স্থানের মাটি কুপিয়ে আলগা করে ২০-২৫ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টি.এস.পি ও ২০০ গ্রাম পটাস সার পয়োগ করতে হবে)। (৫) পুষ্টি সমৃদ্ব ফল হওয়ায় শরীরের জন্য উপকারী।
উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে বাংলাদেশে বাড়ির আশে-পাশ্বে, পতিত, অউর্বর জমিতে লটকন চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে।