
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ২নম্বর রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদিপুকুর পারঘাটের গ্রামীণ মেঠোপথ ধরে হাঁটলে যতদূর চোখ যায় মাঠজুড়ে শুধু ধনেপাতা আর ধনেপাতা। বাতাসে ধনেপাতার গন্ধ আর সবুজের সমারোহ। শীতের শুরুতে আগাম ধনেপাতা চাষ লাভজনক হওয়ায় এবারও ব্যাপক হারে বেড়েছে আবাদ। যেন ধনেপাতায় স্বপ্ন বুনেছে এ গ্রামের কৃষকরা।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আগে থেকেই মিঠাপুকুরের পারঘাট আগাম শীতকালীন সবজির জন্য বিখ্যাত। পারঘাটের কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে আলু, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, পটোল, সিম, মুলা, শসা, করলা, বিভিন্ন রকমের শাকসবজি উৎপাদন করে থাকেন। এখানকার ফসলি জমিগুলো দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি হওয়ার পাশাপাশি উঁচু ও পানি না জমায় কৃষকদের আবাদ করা ফসলের বাম্পার ফলন হয়। দাম বেশি পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পারঘাটের রাস্তার তেপাতিসংলগ্ন সিংগীর ডোবা নামক গ্রামে রাস্তার উত্তর-পশ্চিম পাশে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে শুধু ধনেপাতা আর ধনেপাতা। কৃষক তাদের ধনেপাতার ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রখর রোদে কেউ ধনেপাতা তুলছেন আবার কেউ সার দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা এসেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত কৃষকরা আগেই পাইকারি বিক্রি করে দিয়েছেন।
আলমগীর নামে এক কৃষক জানান, তার ৫০ শতাংশ (এক বিঘা) ধনেপাতার জমি এবার তিনি পাইকারি দুই লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। বিঘাপ্রতি তার সর্বোচ্চ খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ধনেপাতা বিক্রির উপযুক্ত হয়। পরে দ্রুতগতিতে ধনেপাতা বাজারজাত করেন পাইকারি বেপারীরা। একবার ধনেপাতা বিক্রির পর আবার ওই জমিতে ধনেপাতা চাষ করা যায়। এমনকি ভাগ্য ভালো থাকলে আবারও আগের দামের কাছাকাছি বিক্রি করতে পারবেন।
ইসমাইল নামে আরেক কৃষক জানান, তিন বছর থেকে এখানকার সব কৃষক একযোগে ধনেপাতা লাগায়। দাম মোটামুটি ভালো পাওয়ায় এখন সবাই ধনেপাতা চাষ নিয়েই ব্যস্ত।
ব্যবসায়ী মমিনুল, শহিদুল, রউফ জানান, তারা পার্শ্ববর্তী জেলা এবং উপজেলা থেকে এখানে জমিতে থাকা ধনেপাতা পাইকারি কিনেছেন। তাদের নিজস্ব শ্রমিক এসব জমি দেখভাল করেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন কাঁচামাল আড়তে তারা ধনেপাতা বিক্রি করেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল আবেদীন জানান, এ বছর মিঠাপুকুরে ৭২ হেক্টর জমিতে ধনেপাতার চাষ হয়েছে। ধনেপাতা চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন এই ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।