
রিফাত হোসাইন সবুজ, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে দীর্ষদিন ধরে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা ধান চাষে অভ্যস্ত হওয়ায় যোগ্য জমিতে ফসলের বৈচিত্র আনার জন্য ধান চাষের পাশাপাশি অল্প সময় ও কম খরচে লাভবান হয়ে ভাগ্য বদলের চেষ্টা হিসেবে মরিচ চাষের দিকে দিনদিন অগ্রসর হচ্ছে চাষিরা। মরিচ মশলা জাতীয় ফলস হওয়ায় খেতে গেলে মুখে ঝাল লাগলেও এই মরিচই উৎপাদন করে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের মুখে এবার হাসি ঝিলিক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অ লেও বাজারজাত হচ্ছে রাণীনগরের মরিচ। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মরিচের চাষ তাই রাণীনগরের অনেক কৃষকের ভাগ্য ফিরাচ্ছে মরিচ। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৫টি ইউনিয়নে চাষিরা ধান চাষের পাশাপাশি মরিচ চাষ শুরু করেছে। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে মরিচ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে বন্যার কারণে হঠাৎ করে প্রতি কেজি মরিচ ৮০ থেকে ১ শত ২৫ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ৬০ টাকা পর্যন্ত খুরচা বিক্রি হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছিল। রাণীনগর উপজেলায় স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বাঁশগাইয়া, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টার, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের মরিচ আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার উঁচু শ্রেণীর দোঁআশ পলি মাটিতে মরিচের ভাল ফলন হচ্ছে। বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় চাষিরা দিনদিন মরিচ চাষে মনোযোগ দিচ্ছে। পারিবারিক প্রয়োজনে বাড়ির আশেপাশে চাষ যোগ্য জমিতে মরিচ চাষ শুরু হলেও ধীরে ধীরে বানিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য মরিচ চাষ করছে। অল্প জমিতে বেশি ফলন এবং অধিক মুনাফা পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে মরিচ উৎপাদনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে তাপদাহ উপেক্ষা করে ক্ষেত থেকে চাষিরা কাঁচা-পাকা মরিচ তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ভাল মূল্য দিয়ে মরিচ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। মরিচ বিক্রির জন্য এখানকার চাষিদের কোন রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। তবে তারা অভিযোগ করেন, বালাই নাশক ঔষুধ মরিচ ক্ষেতে বেশি দিতে হচ্ছে। কিছুটা উঁচু শ্রেণীর জমিতে অন্য ফসল খুব একটা ভালো না হওয়ার কারণে স্থাণীয় চাষিরা কিছুটা বাধ্য হয়েই এসব জমিতে মরিচ চাষ করছেন। কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমি থেকে ৫০-৬০ মণ কাঁচা মরিচ উৎপাদন হয়। প্রতি বিঘায় মরিচ উৎপাদনে খরচ হয় ১০-১৫ হাজার টাকা। অন্য যে কোন ফসলের তুলনায় মরিচ চাষে লাভ বেশি, এ কারণে কৃষকরা মরিচ চাষে ঝুঁকেছেন বেশি।
উপজেলার পারইল গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, আমি নিয়মিত ভাবে পৈতিক জমিতে ধান চাষ করি। এর পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে প্রায় এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এই পর্যন্ত যা বিক্রি করিছি তাতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার ভাল লাভ হবে। অল্প খরচ ও কম সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় আমার দেখাদেখি প্রতিবেশি চাষিরাও ধীরে ধীরে মরিচ চাষের দিকে আগ্রহী উঠছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার অফিসার কৃষিবিদ মো: শহিদুল ইসলাম জানান, রাণীনগরে প্রতিটি ইউনিয়নেই চাষিদের ধান চাষে বেশি আগ্রহ। একই জমিতে বারবার ধান চাষ হলে জমির উর্বরতা কিছুটা কমে যায়। মাটির বৈচিত্র ও উর্বরতা রক্ষায় চাষিদেরকে আমরা পরিবর্তনশীল এবং লাভজনক ফসল চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। যার ফলে চাষিরা ধানের পাশাপাশি মরিচ চাষ করছে। এই মশলা জাতীয় ফসল চাষ করে উপজেলার প্রায় ৫টি ইউনিয়নের চাষিরা লাভবান হচ্ছে । আমাদের পক্ষ থেকে অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে যাবতীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।