
রিফাত হোসাইন সবুজ, নওগা: নওগাঁর মাঠে মাঠে এখনো প্রায় অর্ধেক পরিমান জমির ধান কাটার অভাবে পড়ে আছে। শ্রমিক সংকট। আর সংকটের কারণে বাজারে শ্রমিকের দাম উর্ধ্বমূখী। অপরদিকে বাজারে ধানের দাম নিন্মমূর্খী। শ্রমিক সংকট এবং ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা এখন হতাশায় পড়েছেন। কৃষকরা চোখে যেন সরষে ফুল দেখছেন।
শ্রমিক সংকট মেটাতে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় ব্যতিক্রম উদ্যোগে নিয়েছেন কৃষি অফিসার। তিনি স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগীতা চেয়েছেন যেসব গরীব ও অসহায় কৃষক শ্রমিকের দাম মেটাতে অক্ষম তাদের ধান কাটতে। আর তার ডাকে সাড়া দিয়ে মাঠে গিয়ে শনিবার সকালে দেড় বিঘা জমির ধান কেটেছেন ধামইরহাটের সামাজিক সংগঠন ‘মানব সেবা সংগঠন, দেখাবো আলোর পথ এবং আস্থার হাত’ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
উপজেলার বিহারী নগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আজাহারের জমির ধান কেটে দিয়েছেন কৃষি অফিসার সেলিম রেজা। তিনি টি শার্ট এবং গলায় গামছা জড়িয়ে একটি কাস্তে নিয়ে জমিতে গিয়ে কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনগুলো অংশ নিয়েছেন। ‘যারা শ্রমিকের অভাবে বাড়িতে বসে আছেন শ্রমিকের অপেক্ষা না থেকে মাঠে আসুন, নিজের ধান নিজে কাটুন।’ এমন স্লোগানে আগামী এক সপ্তাহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরীব ও দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে দেয়া হবে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
স্বেচ্ছাসেবী আবু সাইদ নামে এক যুবক বলেন, এমনিতেই কৃষকদের লোকসানে শিকার হতে হচ্ছে। বর্গাচাষী এবং গরীব কৃষক যারা আছেন তারা টাকার বিনিময়ে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে পারছেন না। তাই গরীব ও অসহায় কৃষকদের আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহ ধান কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপজেলার সব কৃষককের ধান কাটা হয়ত আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করব যতটুকু পারা যায়।
মানব সেবা সংগঠনের সভাপতি রাসেল আহমেদ বলেন, আমরা কৃষি অফিসারের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের সংগঠনের ১০ জন সদস্য স্বেচ্ছায় কৃষকদের ধান কাটার কাজে অংশ নিয়েছি। মুলত যারা শ্রমিকদের টাকা দিয়ে ধান কাটতে অক্ষম তাদের ধানই কেটে দেয়া হচ্ছে।
আস্থার হাত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আহ্বায়ক অরিন্দম মাহমুদ বলেন, বাজারে ধানের দাম কম, শ্রমিকের দাম বেশি। এক বিঘা ধান কাটতে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাগছে। যা গরীব কৃষকদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে একাত্ব ঘোঘণা করে ২৫ জন যুবক অংশ নিয়ে ওই গবীর কৃষকের ধান কেটে দিয়েছি। এতে করে কৃষকের কিছুটা সাশ্রয় হলো এবং তার উপকার হলো। কৃষকদের সহযোগীতা করতে আমাদের এমন উদ্যোগ অব্যহত থাকবে।
ভুক্তভোগী কৃষক আজিজার রহমান বলেন, একদিকে শ্রমিক সংকট অপরদিকে বাজারে ধানের দাম কম। ধানের যে দাম তাতে প্রতিমন ধানে প্রায় সাড়ে ৩শ টাকা লোকসান হচ্ছে। শ্রমিকের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০০-৭৫০ টাকা। শ্রমিক সংকটের কারণে জমি থেকে ধান কাটতে পারছিলাম না। সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা এসে আমার ধান কেটে দিয়েছেন। সংখ্য ধন্যবাদ তাদের, যারা এ অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
চকময়রাম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক এসএম খেলাল-ই রব্বানী বলেন, সবচেয়ে বড় সংকট শ্রমিকের। যেন কৃষকের ধান মাঠেই পড়ে না থাকে, একারণে প্রতিকি হিসেবে সবাইকে অনুরোধ করব, সবাই আমরা মাঠে নামি। কৃষকের পাশে দাঁড়ায়। যে যার ধান তুলি, অন্যের ধান তোলতে সহযোগীতা করি। যে যেখানে যে অবস্থানে আছেন- নিজের ধান নিজে কাটুন, শ্রমিকরে জন্য বসে না থেকে কৃষকের ধান যেন মাঠ থেকে দ্রুত উঠে এ কারনে সবাই যেন আমরা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
ধামইরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সেলিম রেজা বলেন, এই মুর্হূতে মাঠে সোনালী ধান। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা মাঠ থেকে সেই সোনালী ফসল ধানকে ঘরে তুলতে পারছেন না। এটাকে উপলদ্ধি করে কৃষি বিভাগ ধাইমরহাটের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, ছাত্র, সামাজিক সংগঠনসহ সকলকে আহ্বান করেছি- ‘চলুন আমরা মাঠে যায়, কৃষকদের ধান কাটি এবং ধান তুলি।’
আমার ম্যাসেজ হচ্ছে- যারা শ্রমিকের অভাবে বাড়িতে বসে আছেন শ্রমিকের অপেক্ষা না থেকে মাঠে আসুন। নিজের ধান নিজে কাটুন।’ মুলত কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।