
নারিকেলে মাকড়ের ( Mite ) আক্রমণ বর্তমানে বাংলাদেশে খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। মাকড়ের কারণে নারিকেল চাষ অনেকাংশে ব্যহত হচ্ছে। যেখানে নারিকেল বাংলাদেশের অতি পরিচিত একটি অর্থকরী ফসল। নারিকেল গাছের পাতা , ফুল, ফল, কাণ্ড, শিকড়সহ মোটামোটি প্রতিটি অংশই কোন না কোন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। অথচ এই নারিকেল গাছে সারা বছরই রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দ্বারা নানা রকমের সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে নারিকেলে মাকড়ের আক্রমণ নিয়ে কিছু তথ্য নিম্নরূপঃ
নারিকেলে মাকড় ( Mite ) আক্রমণের লক্ষণঃ
১। মাকড়ের আক্রমণে কচি ডাবের খোঁসা আক্রান্ত হয়ে বাদামী রং ধারণ করে এবং কচি অবস্থায় নারিকেলের খোলের ওপর ফাটা ফাটা শুকনো বাদামী দাগ পড়ে।
২। এছাড়াও নারিকেলের বোটার কাছ থেকে খোলের উপর আঁচড়ের মতো ফাটা বাদামী দাগ পড়ে এবং এসব ফাটা জায়গা থেকে আঠালো পদার্থ বের হয়।
৩. মাকড় দ্বারা আক্রান্ত নারিকেল আকারে ছোট ও শক্ত হয়ে যায়।
৪. মাইটের আক্রমণে ডাব ও নারিকেলের স্বাভাবিক রং থাকে না বরং ডাবের রং বেশি গাঢ় হয়ে বির্বণ হয়ে যায়।
৫. মাকড় আক্রান্ত নারিকেল পরিপক্ব হওয়ার আগেই কুঁচকে বিকৃত হয়ে ঝরে পড়ে।
৬. দুই মাস বয়সের নারিকেল মাকড় দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয় এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত এরা আক্রান্ত ফল হতে রস চুষে খায়।
৭. নারিকেল গাছে মাকড়ের আক্রমণের মাত্রা বেশি পরিমাণে হলে গাছ নারিকেল শুন্য হয়ে যায়। ফলে এই সময় মাইট খাদ্যের সন্ধানে গাছের কচি পাতায় স্থানান্তরিত হয়।
৮. সব চেয়ে বেশি মাকড় থাকে নারিকেল গাছের ৩-৪ মাস বয়সের নারিকেলে।
মাকড়ের প্রতিকারঃ
নারিকেল গাছে মাকড় সাধারণত বোঁটার কাছে বৃতির নিচে লুকিয়ে থাকে। তাই মাকড়নাশক প্রয়োগ করলে এরা সহজে মরে না। গাছে নারিকেল না থাকলে মাকড় বেঁচে থাকতে পারে না। কচি নারিকেলে এরা সংজ্ঞবদ্ধ অবস্থায় থাকে। শীত মৌসুম হলো মাকড় দমনের উপযুক্ত সময়। তাই শীতের আগে আক্রান্ত ফল গাছ থেকে নামিয়ে ধ্বংস করে গাছের মাথায় কাঁদি সংলগ্ন এলাকায় মাকড়নাশক স্প্রে করে ঝাঁকসহ মাকড় ধ্বংস করা যেতে পারে।
মাকড় আক্রান্ত নারিকেল গাছে ৫ ধাপে দমন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হয়। তবেই ভালো ফল পাওয়া যায়। নিম্নে ৫ টি ধাপে মাকড় দমন ব্যবস্থাপনা দেখানো হলো-
প্রথম ধাপ : শীত শুরু হওয়ার আগে আশ্বিন-কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর) মাসে আক্রান্ত নারিকেল গাছের বিকৃত ২ থেকে ৬ মাস বয়সের সব নারিকেল কেটে গাছতলাতেই আগুনে পুড়িয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে যাতে সেসব অবর্জনা অন্য গাছে মাকড় ছড়াতে না পারে।
দ্বিতীয় ধাপ : আশ্বিন-কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর) মাসে গাছের মাথা পরিষ্কার করার পর কাঁদি সংলগ্ন জায়গাতে ১.৫-২.০ মিলিলিটার হারে মাকড়নাশক ওমাইট/সুমাইট/ রনভিট/ডেনিটল/ ভার্টিমেট অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এ সাথে আশপাশে কম বয়সি গাছের কচিপাতায় একইভাবে মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে।
তৃতীয় ধাপ : ফাল্গুন-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ) মাসে প্রথমবার মাকড়নাশক প্রয়োগের পর গাছে নতুন ফুল আসলে তাতে ফল ধরবে, ফলের বয়স ২ মাসে মুষ্টির আকার হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
চতুর্থ ধাপ : তৃতীয়বার চৈত্র-বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে) মাসের পর স্প্রে করার আগে কাটার মতো ডাব ও নারিকেল সংগ্রহের পর আগের মতো একই মাত্রায় মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে।
পঞ্চম ধাপ : চতুর্থ ধাপের মতো জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় (মধ্য মে থেকে মধ্য জুন) মাসে পাশের ছোট গাছসহ নির্দিষ্ট গাছগুলোতে শেষবারের মতো মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। এভাবে ৫টি ধাপে মাকড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ছত্রাকজনিত রোগের কারণেও কচি অবস্থায় নারিকেল ঝরে যায়। তাই প্রথম ও দ্বিতীয় বার স্প্রে করার সময় প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন/নইন/এমকোজেম/জেনুইন নামক ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।