
পেঁয়াজ চাষে পেঁয়াজ রোপনের পর সঠিক সময়ে সেচ ও সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হয়। পেঁয়াজ চাষে কোন রোগবালাই বা পোকার আক্রমণ হলে তা দমনের ব্যবস্থা করতে হয়। তাই পেঁয়াজ চাষে রোগবালাই দমনে উপায় গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন:
পোকা মাকড়ের আক্রমণ: পেঁয়াজ চাষের জমিতে ছোট আকারের থ্রিপস নামক পোকা পাতার রস চুষে খায় বলে অধিক আক্রমণে পাতা শুকিয়ে গাছ মরে যায় ও ফলন কম হয়। যা সহজে চোখে দেখা যায় না। স্ত্রী পোকা সরু, হলুদাভ। পুরুষ গাঢ় বাদামী । বাচ্চা পোকা হলুদ অথবা সাদা । এদের পিঠের উপর লম্বা দাগ দেখা যায়। রস চুষে খায় বলে পাতা রূপালী রং ধারণ করে অথবা ক্ষুদ্রাকৃতির বাদামী দাগ বা ফোটা দেখা যায়। আক্রমণ বেশী হলে পাতা শুকিয়ে মরে যায়। কন্দ আকারে ছোট ও বিকৃত হয়। এর স্ত্রী পোকা পাতার কোষের মধ্যে ৪৫-৫০ টি ডিম পাড়ে।৫-১০ দিনে ডিম হতে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয়। নিম্ফ ১৫-৩০ দিনে দুটি ধাপ অতিক্রম করে। প্রথম ধাপে খাদ্য গ্রহণ করে এবং দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য গ্রহণ না করে মাটিতে থাকে । এরা বছরে ৮ বার বংশ বিস্তার করে এবং স্ত্রী পোকা পুরুষ পোকার সাথে মিলন ছাড়াই বাচ্চা দিতে সক্ষম ।
দমন ব্যবস্থাপনা: সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার ক্ষেতে মাকড়সার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এ পোকা দমন করা যায়। অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা
পার্পল বস্নচ / বস্নাইট: এ রোগ পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। যে কোন বয়সে গাছের পাতা ও কান্ড আক্রান্ত হয়। অধিক আক্রমনে পেঁয়াজে ফুল আসে না ও ফসল কম হয়। আক্রান্ত বীজ বেশিদিন গুদামে রাখা যায়না । বাজার মূল্য কমে যায়। অল্টারনারিয়া পোরি ও স্টেমফাইলিয়াম বট্রাইওসাম নামক ছত্রাকদ্বয় দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
কান্ডে প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা হালকা বেগুনী রংয়ের দাগের সৃষ্টি হয়। দাগগুলি বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিণত হয় এবং আক্রান্ত স্থান খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা ক্রমান্বয়ে উপরের দিক হতে মরতে শুরু করে।পাতা বা কান্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানের দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ পাতা বা বীজবাহী কান্ড ভেঙ্গে পড়ে এতে বীজ অপুষ্ট হয় ও ফলন কম হয়। বৃষ্টিপাত হলে এ রোগ দ্রত বিস্তার লাভ করে। এরা আক্রান্ত বীজ, গাছের পরিত্যাক্ত অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা :
* রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত ব্যবহার
* রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা, এজন্য বীজ বপনের সময় বীজ শোধন করা।
* ফসল পর্যায় অনুসরন করা অর্থ্যাৎ একই জমিতে পর পর কমপক্ষে ৪ বছর পেঁয়াজ না করা
* পেঁয়াজ গাছের পরিত্যাক্ত অংশ, আগাছা ধ্বংশ করা
* অনুমোদিত ছত্রাক নাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করা ।
কান্ড পঁচা রোগ: স্ক্লেরোসিয়াম রলফসি ও ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাক দ্ধারা এ রোগ হয়। যে কোন বয়সে গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কন্দ ও শিকড়ে এর আক্রমণ দেখা যায়। আক্রান্ত কন্দে পচন ধরে এবং আক্রান্ত কন্দ গুদামজাত করে বেশী দিন রাখা যায় না। আক্রান্ত গাছের পাতা হলদে হয়ে যায় ও ঢলে পড়ে । টান দিলে আক্রান্ত গাছ খুব সহজে মাটি থেকে কন্দসহ (পেঁয়াজ) উঠে আসে। আক্রান্ত স্থানে সাদা সাদা ছত্রাক এবং বাদামী বর্ণের গোলাকার ছত্রাক গুটিকা (স্ক্লেরোসিয়াম ) দেখা যায়। অধিক তাপ ও আর্দ্রতা পূর্ণ মাটিতে এ রোগ দ্রত বিস্তার লাভ করে। ক্ষেতে সেচ দিলেও এ রোগ বৃদ্ধি পায়। এ রোগের জীবাণু মাটিতে বসবাস করে বিধায় সেচের পানির মাধ্যমে ও মাটিতে আন্তঃ পরিচর্যার সময় কাজের হাতিয়ারের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা :
* আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
* মাটি সব সময় স্যাঁত স্যাঁতে রাখা যাবে না। ক্ষেত শুকনা রাখা।
* আক্রান্ত জমিতে প্রতি বছর পেঁয়াজ /রসুন চাষ না করা।
* অনুমোদিত ছত্রাক নাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
তথ্যঃ এআইএস