
জিয়াউল হক জুয়েল, শেরপুর: ধান ক্ষেতে পোকামাকড় দমনে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং এর ব্যবহার। দেশের চাষীরা ধানসহ বিষমুক্ত বিভিন্ন সবজি উৎপাদনেও ব্যবহার করছে এ পদ্ধতির। এতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচও কম হচ্ছে, কমছে বায়ু দূষণও।
ধান ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা মাকড় দমনে পরিবেশ বান্ধব কৃষি পদ্ধতি গুলোর মধ্যে পার্চিং অন্যতম। স্বল্প খরচে ধানের ক্ষেতে গাছের ডাল, ধৈঞ্চা কিংবা বাঁশের খুঁটি স্থাপন করে পাখি বসার ব্যবস্থা করাকে পার্চিং বলে। এ পদ্ধতিতে ধান ক্ষেতের সেই ডালে কিংবা গাছে পাখি বসে ধানের ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ধরে ধরে খায়। আর এ পার্চিং দুই পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এক হলো ডেথ পার্চিং ও অন্যটি লাইভ পার্চিং। ধান ক্ষেতে বাঁশের খুঁটি কিংবা গাছের মরা ডালপালার মাধ্যমে পাখি বসার স্থান করাই ডেথ পার্চিং এবং ক্ষেতে ধৈঞ্চা জাতিয় গাছ লাগিয়ে পাখি বসার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলাই হলো লাইভ পার্চিং। দেশের কৃষকের কাছে ধানের পোকামাকড় দমনে এই দুই পদ্ধতিই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আবার অনেকে লাইভ পার্চিংও ব্যবহার করে তাতে মাটিতে ধৈঞ্চা পাতা পরে পচে জৈব সার তৈরি হয়ে মাটির উর্বরত বৃদ্ধি করে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকের ফসলের মাঠে দেখা গেছে, পোকামাকড়ের হাত থেকে ধানের গাছ রক্ষা করতে চারা লাগানোর মাসখানেকের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যবধানে তিনি গাছের ডাল ও কঞ্চি পুঁতে রেখেছেন। পাখিগুলো ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। অন্যবার যেখানে তাদের তিন-চার দফা কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এ বছর মাত্র একবার কীটনাশক ব্যবহার করলেই হবে বলে আশাবাদী চাষীরা।
শেরপুর জেলার বেশির ভাগ কৃষক পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে আমন খেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করছেন। অনেক জমিতে মাঝেমধ্যে লাগিয়েছেন ধঞ্চেগাছ। এতে কৃষকেরা উপকার পাচ্ছেন। কীটনাশক কম লাগায় কৃষকেরা খুশি। বাঁশের খুঁটিতে, ধৈঞ্চা গাছে ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল এসব পাখি বসে ধানের খেত থেকে পোকামাকড় ধরে খায়। যখন রোদের তাপ কম থাকে বিশেষ করে সকালে আর বিকেলে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব পাখি পার্চিং করা জায়গায় বসে পোকা-মাকড় ধরে খায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি করে পোকা-মাকড়। এর হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ে আরও ১০ শতাংশ। পার্চিং পদ্ধতির ফলে কৃষকরা যেমন ফসলের পোকা-মাকড় দমন করতে পারছেন তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও কমে আসছে। ধান ফসলের প্রতি ৫ শতকে ১টি করে পার্চিং ব্যবহার করতে হয়। একর প্রতি ১৮টি থেকে ২০টি পার্চিং ফসল রোপণের পরপরই স্থাপন করতে হয়। দেশের প্রত্যেক জেলার কৃষকদের পার্চিং ব্যবহারে আগ্রহী করতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন গ্রামে উঠান বৈঠক, মাঠ পরিদর্শন, বিভিন্ন সেমিনার এর মাধ্যমে এমনকি কৃষি অফিস ধৈঞ্চা গাছ রোপনের জন্য বীজ দিয়েও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।
কৃষিবিদদের মতে, জমির কাছে পাখিদের বসার স্থান করে দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর পোক-মাকড় এর বংশবিস্তার কমানো যায়। পোকার বসতি তৈরির সুযোগও থাকে না। এছাড়া পাখির বিষ্ঠা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, ধানের স্কিপার পোকার মথ ধরে খায়। লার্ভা বা কিড়াগুলোর মধ্যে শিষ কাটা লেদা পোকা, সবুজ শূড় লেদা পোকার কিড়া খায়। তাই বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনে পরিবেশ বান্ধব এ পার্চিং পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।