
দেশের কৃষকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বিনা মরিচ-১ জাতের উচ্চ ফলনশীল মরিচ। তুলনামুলক কম ঝালের এ মরিচে দেশীয় ও প্রচলিত জাতের তুলনায় ১৩০ শতাংশ থেকে ১৪০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। নতুন জাতের এই মরিচ একইসাথে মসলা, সালাদ ও সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ২০১৬ সালে বিনার কৃষি বিজ্ঞানীরা বিনা মরিচ-১ জাত উদ্ভাবন করেছেন।
বিনা মরিচ-১ জাতের গাছ খর্বাকৃতি। এটি আকারে বেশ বড় ও মোটা। প্রতিটি গাছে প্রত্যেকবারে ৩০ থেকে ৩৫টি মরিচ ধরে। এইভাবে প্রতি মৌসুমে ৮ থেকে ৯ বার ফসল তোলা যায়। এতে প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ টন মরিচ ফলানো সম্ভব। পূর্ণ বয়স্ক গাছ ৪৫ থেকে ৫৫ সেমি. পর্যন্ত উঁচু হয়। তবে মরিচের আকার বেশ বড় ও মোটা। ফলে এ বিনা মরিচ-১ যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম। গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল-ফল আসা শুরু হয় এবং দীর্ঘদিন ফলন দেয়। সঠিক পরিচর্যায় এ মরিচের উৎপাদন অন্য যে কোনো দেশীয় ও প্রচলিত জাতের মরিচের তুলনায় ১৩০ শতাংশ থেকে ১৪০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। ফলে প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ টন বিনা মরিচ-১ ফলানো সম্ভব, যা অন্য কোনো মরিচের ক্ষেত্রে কল্পনাতীত বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ও বিনার কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিনা’র বৈজ্ঞানিকদের নিরলস পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাতের ধান, পাট, ডাল, সরিষা, বাদাম, টমেটোসহ বিভিন্ন ফসলের একাধিক জাত উদ্ভাবন করে আসছে। তবে উচ্চফলনশীল বিনা মরিচ-১ নামের এ জাতের মরিচের উদ্ভাবনটি স্বাভাবিক কারণেই অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। এ উদ্ভাবনটি অন্য ফসলের জাতের উদ্ভাবনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই মরিচের ফলন, আকার, কার্যকারিতা ও উৎপাদনের সফলতা কৃষকদের মাঝে দ্রুত বিস্তার করবে।
তথ্য মতে, বিনা’র কৃষি বিজ্ঞানী ড. রফিকুল ইসলাম ২০১২ সালে চীনের একটি স্থানীয় মরিচের জাত থেকে বীজ সংগ্রহ করে ভিয়েনা ও অস্ট্রিয়ায় বিভিন্ন মাত্রায় রেডিয়েশন প্রয়োগ করে দীর্ঘ চার বছর গবেষণায় এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এ জাতটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তীতে দেশের বিভন্ন অঞ্চলে শীত মৌসুমে উদ্ভাবিত জাতের বিনা মরিচ-১ চাষ করে কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করে। বিভিন্ন সফলতা বিবেচনায় ও ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বাংলাদেশ বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৭ সালে বিনা মরিচ-১ শীতকালীন ও উচ্চফলনশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্য নিবন্ধিত হয়। এ বছর শেরপুরের নকলা উপজেলার পাঠাকাটা এলাকায় এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত বিনা উপকেন্দ্রে বিনা মরিচ-১ চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। এ সফলতা দেখে স্থানীয় কৃষকরা এ মরিচ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাসরিন আক্তার জানান, উপকেন্দ্রে পরীক্ষা মূলকভাবে বিনা মরিচ-১ চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। এর উৎপাদন দেখে স্থানীয় কৃষকরা অন্য মরিচের পরিবর্তে এ মরিচ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সঠিক পরিচর্যায় এ মরিচের উৎপাদন অন্য যে কোনো দেশীয় ও প্রচলিত জাতের মরিচের তুলনায় ১৩০ শতাংশ থেকে ১৪০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। ফলে প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ থেকে ৩৫ টন বিনা মরিচ-১ ফলানো সম্ভব, যা অন্য কোনো মরিচের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ জানান, কৃষকরা বিনা মরিচ-১ চাষে যে পরিমাণ লাভবান হবেন, তা অন্য জাত চাষের তুলনায় অধিকতর। তাই এ মরিচ চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে কৃষি বিভাগ হতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে। সামনে এ জাতের মরিচ চাষ বৃদ্ধি পাবে এবং চাষীর সংখ্যাও বাড়বে বলে আশাবাদি।