
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) দুই শিক্ষক সম্প্রতি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চুকুরের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালক ড. এ কে এম আমিনুল ইসলাম বিইউ রোজেল-১ নামে চুকুরের এ নতুন জাতটি উদ্ভাবন করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে চুকুরের জাতটি অবমুক্ত করা হয়েছে।
জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এর গাছ ঝোপালো, খাটো আকৃতির এবং গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল ধরে। এছাড়া ফলের বৃত্তি মোটা, বড় ও মাংসালো, ফলন (৩.৫-৪.০ টন) বেশি। যেখানে দেশীয় বা অন্যান্য জাতের চুকুরের বৃদ্ধির তুলনায় ফলের সংখ্যা কম, আকৃতি ছোট, বৃত্তি পাতলা হওয়ায় ফলন কম এবং জীবনকাল ১৮০-২১০ দিন। কিন্তু বিইউ রোজেল-১ জাতটির জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন।
জাতটির উদ্ভাবকের মতে, এই চুকুর শুধু নিজেদের খাবার হিসেবে নয়, কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি চুকুর প্রক্রিয়াজাত করেও ব্যবহার করা যায়। চুকুর দিয়ে উৎপাদিত চা, মেস্তাস্বত্ব, জ্যাম, জেলি, জুস, আচার ইত্যাদি বাজারজাত করা গেলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র।
এছাড়া বিদেশে চুকুরের প্রচুর চাহিদা থাকায় চুকুর থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য রফতানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাণিজ্যিকভাবে চুকুর চাষ করছে। বাংলাদেশেও চুকুরকে ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ কলকারখানা গড়ে উঠতে পারে। যার ফলে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশের কৃষক ও জনগণকে এই ফসলের উপকারিতা সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে পারলে চুকুর বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসলে পরিণত হবে।
চুকুর পাতা ও ফলে প্রচুর প্রোটিন, কেরোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে। বীজ থেকে শতকরা ২০ ভাগের বেশি খাবার তেল পাওয়া যায়। এছাড়াও চুকুরে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরে খারাপ কোলেস্টরল কমায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, রক্তে চিনির পরিমান কমাতে সাহায্য করে, ওজন কমাতে এবং বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। উঁচু, মাঝারি উঁচু জমিতে, বাড়ির আঙ্গিনায় এ চুকুর চাষ করা যায়।