
বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি আলু। আলু অর্থকরী ফসল। দেশের প্রায় প্রত্যেক জেলায় আলু চাষ হয়ে থাকে। অনুকূল পরিবেশ ও বাজারজাতকরণের সুবিধার জন্য কিছু কিছু জেলায় ব্যাপক আলু চষা হয়ে থাকে। কিন্তু সঠিক সংরক্ষণের অভাবে প্রায়ই দেখা যায় আলু পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে চাষী চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪.৭২ লাখ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয় এবং এসব জমিতে থেকে প্রায় ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়। তাই মানসম্মত উপায়ে আলু সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
আলু সংরক্ষণের জন্য আলু হিমাগার সবচেয়ে উত্তম স্থান। কিন্তু দেশের সব চাষীদের পক্ষে হিমাগারে আলু সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। তাই কিছু বিষয় লক্ষ্য রেখে ঘরেই ৫-৬ মাস আলু ভালোভাবে সংগ্রহ করা যায়। তবে বীজ আলুর ক্ষেত্রে অবশ্যই বীজ আলু হিমাগারে সংরক্ষন করতে হবে। তা না হলে বীজের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
সঠিক পদ্ধতিতে মাঠ থেকে আলু সংগ্রহ: আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আলু ফসল ৮৫-৯০ দিনের মধ্যে পরিপক্বতা লাভ করে। ক্ষেতে আলু গাছ ওপর থেকে মরতে শুরু করলে আলু সংগ্রহ করা যায় অথবা আলু পরিপক্ব হওয়ার পর আলু গাছের গোড়া থেকে কেটে ফেলে হাম পুলিং করে আলু সংগ্রহ করা যায়। এতে আলুতে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। মেঘলা ও বৃষ্টির দিনে আলু উত্তোলন করা ঠিক না। আলু সকালের দিকে উত্তোলন করা ভালো। মাটি ভেজা অবস্থায় কোন ক্রমেই ফসল সংগ্রহ করা ঠিক হবে না। মাঠ থেকে আলু উত্তোলনের সময় খুব খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অবস্থাতেই কোদাল বা লাঙলের আঘাতে আলু কেটে নষ্ট না হয়। আলু উত্তোলনের পর প্রখর সূর্যালোকে আলু ফেলে রাখা উচিত না, তাই মাঠে এক পাশে ছায়া যুক্ত স্থানে পাতলা কাপড় বা খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। আধঘন্টার বেশি সময় সূর্যালোকে রাখা যাবে না, রাখলে আলু পুড়ে যেতে পারে ও বøাক হার্ট রোগ হতে পারে। আলু উত্তোলন কাজ শেষ হলে তা পরিবহনের জন্য পাটের বস্তা ব্যবহার করা উত্তম। আলু সেট হতে বস্তায় ভরার সময় প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা গামলা ব্যবহার করা ভালো। যদি বাঁশের ঝুড়ি ব্যবহার করতে হয়, তবে তাতে কাপড়ের প্রলেপ বা চট অথবা ছালা বিছিয়ে নিতে হবে। বাড়িতে বা গুদামে রাখার সময় আলু বেশি উচু থেকে ঢালা উচিত নয় এতে আলু থেতলে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
আলুর কিউরিং ও গ্রেডিং: মাঠ থেকে আলু সংগ্রহ করা শেষ হলে আলু ১-৭ দিন পরিষ্কার ঠান্ডা জায়গায় বিছিয়ে রেখে পাতলা কাপড় দিয়ে রাখতে হয়। এতে আলুর গায়ের ক্ষত সেরে যায় ও পোকা আক্রমণ থেকে সংগ্রহীত আলু রক্ষা পায় আর এ পক্রিয়াকেই কিউরিং বলে। এর পর আলু গুদামজাত করার আগে দেখতে হবে আলু কাটা, ফাটা, থেঁতলানো, দাগপড়া, ক্ষত রোগাক্রান্ত, সবুজ রঙ, পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত, খুব ছোট আকৃতির এবং অস্বাভাবিক আলু গুলোকে আলাদা করে বাছাই করতে হবে যাবে প্রাথমিক বাছাই বলে। এ বাছাই না করলে ভালো বীজের সাথে খারাপ বীজ মিলে সব বীজ নষ্ট হতে পারে। এমনকি পচনও ধরতে পারে। অনুমোদিত বীজ বাছাই করে গ্রেডিং করতে হয়। ২৮ মিমি. থেকে ৪০ মিমি. পর্যন্ত ‘এ’ গ্রেড, ৪১ মিমি. থেকে ৫৫ মিমি. পর্যন্ত ‘বি’ গ্রেড। এভাবে গ্রেডিং করার পর বীজ আলু নতুন রোগমুক্ত শুকনো বস্তায় রাখতে হবে। বস্তা বাতাস চলাচলের উপযোগী হলে ভালো হয়।
সংরক্ষণ: আলু রাখার জন্য ঘরে মাঁচা বা তাক বানিয়ে নিতে হবে। মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উপরে মাঁচা বানাতে হবে। এক মাঁচা থেকে অন্য মাঁচার উচ্চতা আড়াই থেকে তিন ফুট হলে পরবর্তী বাছাই কাজ সহজতর হবে। আর হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করলে সেখানে তাপমাত্রা নির্ধারণ করে দিতে হবে। হিমাগারে আলু বীজ রাখার সময় বস্তা বন্দির পর আলু বীজ বিভাগের দেয়া নমুনা অনুসারে ট্যাগ কার্ড লাগিয়ে নিতে হবে এবং প্রাথমিক প্রিকুলিং কক্ষে রাখতে হবে। প্রিকুলিং কক্ষ ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা ১২.৫-১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে, যেন বীজ আলু ঠান্ডা সহনশীল হয়।
যে কাজগুলো করা যাবে না: গুদাম ঘরে অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণ আলু রাখা যাবে না। এতে অক্সিজেনের অভাব হয়। ফলে সংরক্ষিত আলুতে কালো দাগ রোগ দেখা দিতে পারে। আলুতে সূর্যের আলো পড়তে দেয়া যাবে না। আলো পরলে আলু সবুজ রংয়ের হয় এবং চামড়ায় বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি হয়।