
দেখতে স্বাভাবিক বাছুরের চেয়ে ছোট। বয়স ১৪ মাস, ওজন ২৩ কেজি, উচ্চতা ২২ ইঞ্চি। দুরন্তপনা ও অন্য সব গরুর চেয়ে ছোট বলে তার মালিক আদর করে নাম রেখেছেন ‘টুনটুনি’। স্থানীয়দের আশা, সাভারের রানির রেকর্ড ভেঙে জীবিত হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু টুনটুনি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় স্থান করে নেবে শিগগির।
গত ১৯ আগস্ট দুই বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া খর্বাকার রানির উচ্চতা ছিল ২০ ইঞ্চি আর ওজন হয়েছিল ২৬ কেজি। মারা যাওয়ার পর রানিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস বুক। তবে রানির চেয়ে টুনটুনির উচ্চতা দুই ইঞ্চি বেশি আর ওজন তিন কেজি কম।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখারচালা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের বাড়িতে গত বছরের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে জন্ম হয় বকনা (মাদি) বাছুর টুনটুনির।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরের গরুটি মায়ের এ পাশ কাটিয়ে ওপাশে টুনটুনির দুরন্তপনা চলে হরদম। মা আদর করতে চাইলে দৌড়ে দুরে সরে দুষ্ট টুনটুনি। মা মুখ নাড়তেই ফের মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়ায় সে। এমনি খুনসুটিতে সকাল গড়িয়ে বিকাল পর্যন্ত মায়ের চারপাশে ঘোরাফেরায় মত্ত থাকে এক বছর বয়সের গরুর বাছুর টুনটুনি। এখন সে পরিবারসহ গ্রামের বহু মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পরিবারের দাবি এটিই হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু। যার ওজন ২১ থেকে ২২ কেজি হবে বলে জানান গরুর মালিক। টুনটুনি পাখির মতো দারুণ তিড়িংবিড়িং করে বলে সে বকনা বাছুরের নাম রাখা হয়েছে টুনটুনি। তাই টুনটুনি নামের খর্বাকৃতির এ বকনা গরুটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু এমনটি স্থানীয়রাও দাবি করেন।
গরুর মালিক কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমরা জানতাম না এটিই সবচেয়ে ছোট গরু। টুনটুনি মা এর আগে আরও আটটি বাছুরের জন্ম দিয়েছে। আগে জন্ম দেওয়া সবগুলো বাছুরের শরীরের ধরন ছিল স্বাভাবিক। গত বছরের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে জন্ম হয় টুনটুনির। জন্মের সময় অনেকটা খরগোশের মতো আকৃতি ছিল। জন্মের কিছুক্ষণ পর হাঁটতেও শুরু করে। বাছুরটি এতই ছোট ছিল যে, উঁচু করে ধরে রেখে মায়ের দুধ খাওয়ানো হতো। তবে এমন আকৃতির বাছুর শুধু তিনিই নন, গ্রামের কেউই এ পর্যন্ত দেখেননি।
কৃষকের স্ত্রী জরিনা বেগম জানান, আমরা কৃষক পরিবার। নিয়মিত আমরা গরু লালন পালন করি। সব সময় আমাদের গোয়ালে ৭/৮ টি গরু থাকে। এ গাভীটির গর্ভে গত বছর অদ্ভুত এক বহন বাছুর (বকনা) জন্ম নিছে। বাছুর এতো ছোট ছিল যে গাভীর ওলানে মুখ লাগাতে পারতো না। পরে কোনো উপায়ন্তর না দেখে তাড়াতাড়ি করে বোতলে দুধ ভরে বান দিয়ে খাওয়ানো হতো বাছুরকে। পরে কুলে তুলে উঁচু করে গাভীর ওলানে ধরলে সে নিজে নিজেই দুধ খেতে পারতো। সকাল দুপুর রাত করে দুধ খাওয়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে এক বছর বয়স হলো বাছুরটির। কিন্তু গায়ে গতরে বড় হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এখন এ বাছুরকে সন্তানের মত আদর করি। অন্য রকম আনন্দ লাগে। গ্রামের মানুষ দেখতে আসে ছবি তুলে দেখতে ভালো লাগে। যদি এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু হয় তাহলে আমাদের গর্ব আমাদের গ্রামের গর্ব দেশের গর্ব।
প্রতিবেশী কামাল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে টিভিতে দেখেছি সাভারের রানী নামের ছোট্ট গরুটি। এখন তার চেয়ে ছোট্ট গরু বাড়ির পাশেই। আমরা কখনো এমন ছোট গরু দেখিনি। খুবই চঞ্চল ছোট বাছুরটি। দেখতেও দারুণ আনন্দ লাগে। সারা দিন মায়ের পাশে পাশে ঘুরে বেড়ায়। আশা করি এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর স্বীকৃতি পাবে।
গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম উকিল উদ্দিন বলেন, টুনটুনির ওজন ২৩ কেজি ও উচ্চতা ২২ ইঞ্চি বলে জানা গেছে। জিনগত খনিজ খাটতি ও হরমোনের কারণে এমনটি হতে পারে। আমাদের কয়েকজন চিকিৎসক বিষয়টি অবজারভেশন করছেন। এমন আকারের গরু আমি এখনো দেখিনি। তবে রেকর্ডের আওতায় যদি পড়ে তাহলে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।