
নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেরপুর জেলার যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই শুধু বোরো ধান ক্ষেতের সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানের মাঠের কোন স্থানের কিছু অংশ ভিন্ন রঙের হলে তা সবার নজরে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনি নজর কেড়েছে জেলার নকলা উপজেলার গনপদ্দী ইউনিয়নের বারইকান্দি এলাকার সৌখিন কৃষক মোঃ শামছুর রহমান আবুলের বেগুনি রঙের ধানের ক্ষেত।
ছবি দেখে মনে হতে পারে প্রযুক্তির ছোয়ায়, ফটোশপে তৈরি করা ধান ক্ষেত অথবা দূর থেকে দেখে মনে হবে ধানের ক্ষেতে বুঝি কোন রোগ বালাই লেগেছে বা পোকার আক্রমণে সমগ্র ক্ষেতের ধান বেগুনী হয়ে গেছে। আসলে এর কোনটিই নয়। এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতার রঙটাই বেগুনী। শুধু পাতার রঙ নয়, ধান ও চালের রঙও বেগুনী বা পার্পল। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এই ধানের পরিচিতি বেগুনী রঙের ধান বা পার্পল রাইস নামেই পরিচিত।
পরীক্ষামূলক এ ধান চাষে শামছুর রহমান আবুলকে নকলা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত সার্বিক পরামর্শ প্রদানসহ ধান ক্ষেতটি বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সড়কের ধারে ওই ধান ক্ষেতটি হওয়ায় এবং রঙ বেগুনি দেখে পথচারিদের নজর কেড়েছে। বর্তমান সময়ে ক্ষেতটির গোছাগুলি উফশী জাতের ধরনের মত। গাছের পাতার রঙ বেগুনি হওয়ায় পুরু ক্ষেত বেগুনি আকার ধারন করেছে।
কৃষক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল চাষী সেবাকে জানান, গত বছর পত্রিকায় বেগুনি রঙের ধানের আবাদে সফলতার খবর দেখে ওই ধান চাষ করার আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস এর সহযোগিতায় চলতি বোরো আবাদের জন্য সুদূর কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার কৃষক মঞ্জুরুলের কাছ থেকে ৫ কেজি বেগুনি রঙের ধানবীজ এনে একবিঘা জমিতে আবাদ করি। ক্ষেতে ধান গাছের বর্তমান অবস্থা দেখে কৃষক আবুলসহ কৃষি কর্তকর্তারা আশা করছেন অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন ভালো হবে। নজর কাড়া বেগুনি রঙের এই ধানে নকলার কৃষকদের নতুন আশা জাগিয়েছে।
নকলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস চাষী সেবাকে জানান, এ বেগুনি রঙের ঐ ধান চাষীকে নিয়মিত সবধরনের পরামর্শসহ ধান ক্ষেতটি তদারকি করছি। ধানটির ফলন ভাল হলে এর বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন এর ফলন কি রকম হবে তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান। কৃষিবিদরা জানান, বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশী জাত নয়, দেশীয় জার্মপ্লাজম। ধারনা করা হচ্ছে চালের রঙ বেগুনী হলে ধানটি উচ্চমূল্যের হবে।
স্থানীয় ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শ মোতাবেক তিনি অত্যন্ত যত্ন সহকারে অংকুরোগদম করে তারপর বীজতলায় ফেলেন। পরে ৪০ দিন বয়সের চারা প্রতিগুছিতে একটি করে চারা দিয়ে একবিঘা জমিতে রোপন করেন। প্রতি গোছায় ১৫ থেকে ২০টি কুশি হয়েছে। গাছের উচ্চতা হয়েছে আনুমানিক ৭০ থেক ৭৫ সে.মি.। ধান গাছগুলো গাঢ় বেগুনী রঙের। কিন্তু কচি পাতাগুলো সবুজ রঙের যা পর্যায়ক্রমে পার্পল (বেগুনি) রঙ ধারন করে।
গত বছরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের অবস্থা বিবেচনায় ধানটির জীবনকাল ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন এবং ফলন একরে ৫৫ থেকে ৬০ মণ। যা আনুমানিক শতাংশে ২০ কেজি (৪ থেকে ৫ টন প্রতি হেক্টরে) হতে পারে। কৃষি কর্মকর্তারা ধারনা করছেন, এই ধানের চালের রং শতভাগ বেগুনী হলে ধানটি উচ্চমূল্যের হবে। তবে কৃষক আবুল জানান, বীজ সংগ্রহকালীন সময়ে চালের রঙটা বেগুনি রঙের দেখেছেন।
শতাংশে ২০ কেজি কম না?