
ভিটামিন ‘সি’ এর প্রধান উৎস লেবু। বাংলাদেশে হরেক প্রজাতির লেবু চাষ হয়। যার মধ্যে কাগজি লেবু, পাতি লেবু, এলাচি লেবু, বাতাবি লেবু ও হাইব্রিড নতুন জাতের সিডলেস (বীজহীন) লেবু বর্তমানে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। সীডলেস (বীজহীন) লেবুতে কৃষকরা লাভবান বেশি হওয়ায় এ লেবু চাষে আগ্রহ বেশি। সীডলেস লেবু চাষ করে মাত্র ৩ বছরেই লাখপতি হয়েছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের উত্তর বাছুরআলগা গ্রামের আব্দুল হাসেম, তার ভগ্নিপতি লুৎফর রহমান ও ছোট ভাই মোস্তাক আহমেদসহ আরে অনেকে।
লেবু চাষি আব্দুল হাসেম বলে, ২০১৬ সালে ৭৫ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়ে ওই জমিতে ৩০৫টি সিডলেস লেবুর কলম করা চারা রোপন করেন। চারা কেনা, চারা রোপন, জমি বন্ধক নেয়া, জমি তৈরি, সেচ ও সারসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রথম বছর তার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। পরের বছর ওইসব গাছে ফলন আসা শুরু হয়। রোপনের পরের বছর তথা প্রথম বছর (২০১৭ সালে) ভালো দাম পাওয়ায় তিনি দুই লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রায় আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন।
হাসেম বলেন, এবছর লেবুর দাম কম থাকায় মাত্র আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়েছে, দাম বেশি পেলে ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারতেন। তিনি প্রতিদিন প্রায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার লেবু বিক্রি করছেন। ফলে তার মাসিক আয় হচ্ছে ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এ হিসাবমতে তার ৭৫ শতাংশ জমি থেকে বছরে আয় হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যা অন্য কোনো আবাদে অসম্ভব। তার এমন সফলতা দেখে তার ভগ্নিপতি ও ছোট ভাই এ সীডলেস লেবুর বাগান করে তারাও সফল হয়েছেন।
অপর এক চাষি মোস্তাক আহমেদ বলেন, তাদের সফলতা দেখে উপজেলার অন্যান্য কৃষকরা এ লেবু চাষে আগ্রহী হয়েছেন। গড়ে উঠেছে অসংখ্য লেবুর বাগান। ফলে এখন আর আগের মতো অন্যান্য জেলা উপজেলা থেকে নকলাতে লেবু আনতে হয়না। নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে নকলার লেবু অন্য জেলা উপজেলায় সরবরাহ হচ্ছে।
অধিকাংশ চাষিরা বলেন, লেবুর বাগান পরিচর্যায় স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগিতা করায় শ্রমিক ব্যয় কম হয়। লেবু বাগানের আয় দিয়েই তাদের সংসারের সব খরচ চলে। ভালোভাবেই চলছে তাদের সংসার, তারা প্রত্যেকেই হয়েছেন লাখপতি। রোপনের বছর বাদে প্রতিবছর একবার ডালপালা ছাটা, মাটি কোপানো, প্রতি ৩ মাসে একবার নিড়ানি ও ২-৩ মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার দিতে হয়। ফলে একর প্রতি বার্ষিক খরচ হয় মাত্র ৫০ হজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর এক একর জমির লেবুতে আয় হয় কমপক্ষে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা। তাছাড়া নিজের উৎপাদিত কলম চারা দিয়ে ফিবছর নতুন বাগান তৈরি করা ছাড়াও প্রতিটি কলম করা চারা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পারেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মণি বলেন, ১২ মাস ফলন দেয়া বীজবিহীন অধিক ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ প্রচুর রস ও সুঘ্রাণ যুক্ত হাইব্রিড জাতের এ সীডলেস লেবুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় নকলার লেবু চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে একবার চারা রোপনের পরে একাধারে ১২ বছর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, লেবু বাগানের মালিকদের সার্বক্ষণিক সঠিক পরার্মশ দিয়ে আসছি। লেবুচাষ লাভজনক হওয়ায় এরইমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউপিতে অসংখ্য বাগান গড়ে ওঠেছে। অধিক লাভজনক এ লেবু বাড়ির উঠানসহ পতিত জমিতে চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।
ধান চাষের চেয়ে লাভ অনেক বেশী