
কুড়িগ্রামের উলিপুরে দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন ডারা গ্রামের উৎস মুখ থেকে শুরু করে চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাচকল স্লোইজ গেট পর্যন্ত বুড়ি তিস্তা অবস্থিত। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার যার প্রায় অধিগ্রহণ না হওয়ায় ১১ কিলোমিটারের দু’পারে কৃষক নানা জাতের শাক-সবজি চাষাবাদ করছে এবং ক্ষুদ্র অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হচ্ছে।
দীর্ঘদিন পলি পরে নদীটির স্রোতের গতিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় প্রতি বছর ভারি বৃষ্টির পানি উপচে পরে উপরের দিকে, ফলে বৃষ্টির পানিতেই দেখা দেয় বন্যা। স্রোতের পথ বন্ধের উপক্রম বুড়ি তিস্তা নদীর তীর ঘেষে কতিপয় ভূমিদস্যু জোরপূর্বক ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে স্রোতের গতিপথ বন্ধ করে দেয়।
এমন অবস্থায় উলিপুরের প্রগতিশীল যুব সমাজ রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি ও উলিপুর প্রেসক্লাব “বুড়ি তিস্তা বাঁচাও উলিপুর বাঁচাও” আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। সাইকেল র্যালি, প্রতীকি পানির ঢল, সন্ধ্যা হলেই উলিপুর প্রেসক্লাব ও গণকমিটির নেতৃবর্গ সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে মিছিলে শহর প্রকম্পিত করে তোলে। আন্দোলনের শিরোনাম ছিলো অবৈধ দখল উচ্ছেদ, ভূমি অধিপ্রহণপূর্বক নদী ক্ষনন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ডেলটা কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের স্রোতের গতিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া বুড়ি তিস্তা-সহ অসংখ্য নদী ক্ষননের উদ্যাগ নেন। প্রায় ৩২ কিলোমিটার ক্ষনন কাজ করতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দেয় প্রায় ১১ কিলোমিটার নদীর গতিপথে।
প্রায় ১১ কিলোমিটার বুড়ি তিস্তা অধিগ্রহণ না করেই জোরপূর্বক ক্ষনন কাজ শেষ করা হলেও রেকর্ডিও বুড়ি তিস্তায় পরা জমি মালিকদের দেয়া হয়নি তাদের জমির দাম। জমির মালিকরা তাদের পাকা ধান ওয়ালা জমি ক্ষনন করতে বাধা দিলেও পুলিশি ভয়ে জমির মালিকরা বাধ্য হয়ে পাকাধানী জমি বিলীন করে দেয়।
এই অধিগ্রহণ হওয়ার বাইরের প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে নদী কর্তৃপক্ষ কোথাও কোথাও গাছ লাগিয়েছে আবার ফাকা রেখেছে অনেক জায়গা। অধিগ্রহণ না হওয়া প্রায় ১১ কিলোমিটার বুড়ি তিস্তার বিভিন্ন অংশে মাটি ধসে পরে গভীরতা আবার পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
জ্যাবরো থ্যাবরো পরে থাকা দুই পারে জমির মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ শাক-সবজি চাষ করে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। পারিবারিক চাহিদা পুরণ করে অনেকে এই সবজি বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। করোনাকালে এই সবজি চাষাবাদ দিয়েই কিছুটা হলেও ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ করেছে অনেকেই।
শিমগাছ, লাউগাছ, নানান জাতের শাক, কলা গাছে ছেয়ে গেছ শত শত হেক্টর বুড়ি তিস্তার দু’পাড়। পাগলাকুড়া পাড়ের সবজি চাষী বাবু, ফুলচাঁদ ও মুকুল জানালেন, নিজস্ব উদ্যেগের গল্প। করোনাকালে পরিবার বাঁচাবার একমাত্র উৎসই ছিলো বুড়ি তিস্তার দু’পাড়। তারা আরো জানালেন, সময়মত নদী ক্ষননের কাজ ও অধিগ্রহন না করলে বৃথা যাবে সরকারের এ উন্নয়ন কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, আপাতত কৃষক সবজি চাষাবাদ করুক, বুড়ি তিস্তা নিয়ে মামলা সংক্রান্ত ঝামেলা যাচ্ছে। ঝামেলা কেটে উঠলেই আবার নতুন করে বুড়ি তিস্তায় গাছ লাগানোর কাজ শুরু হবে।